পাকা তালের রস নেয়ার সহজ পদ্ধতি।

ভাদ্র মাস আসার পূর্বেই পাকা তাল বাজারে পাওয়া যায়।এছাড়া তালগাছের আশেপাশে যারা থাকেন তারা পাকা তাল পড়ার ধুপ ধাপ আওয়াজ প্রায়ই শোনেন।তালের রস বা তালের পিঠে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব একটা পাওয়া যায় না।কচি অবস্থায় তাল যেমন খুবই সুস্বাদু তেমনি পাকা তাল তার থেকে বহু গুণে উপাদেয়।

আমি তো কচি তাল থেকে পাকা তাল বেশি পছন্দ করি।বেশ কিছুদিন(মনে হয় এক বা দুমাস)আগে পারিবারিক কাজে গ্রামে যাওয়া হয়েছিল।সেখান থেকেই বেশ কিছু তাল নিয়ে আসি।আসলে ছবিও তুলে রেখেছিলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।কিন্তু কোন এক ফাঁকে আমার খেয়ালের ভুলে আপনাদের সাথে তালের রস নেয়ার এই গল্পটি ছুটে গিয়েছিল।আজকে সেই অভিজ্ঞতাই শেয়ার করে নিচ্ছি।

তাল একটা দুটো হলে তালের রস ছাড়িয়ে নিতে খুব বেশি অসুবিধা হয় না কিন্তু ছয়টি তাল থেকে প্রায় ১৫ থেকে ১৮টি তালের বীজ হয়। তাই এতগুলো তালের বীজ থেকে রস নেয়া যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ ব্যাপারও বটে।তবে একটা টেকনিক খাটিয়ে নিয়ে সহজে আমি পাকা তাল থেকে তালের রস বের করে নিলাম।যদিও আরো অনেক সহজ পদ্ধতি আছে।আপনাদের যার কাছে যেটা সুবিধা সেটাই করে নেবেন। আমি এই মুহূর্তে দুটি পদ্ধতি দেখাচ্ছি।

.

প্রথম পদ্ধতি হলো ঘষে ঘষে তালের রস বের করে নেওয়া।মূলত এই পদ্ধতিটি ঘন রস পাওয়ার একটি একমাত্র উপায়।কোন প্রকার পানি ছাড়াই তারের জালি এর মধ্যে ঘষে ঘষে ঘন তালের রস বের করে নেয়া হয়।এ সময় অবশ্যই রসের সাথে তালের আঁশ ও চলে আসে।যেহেতু পানি দেয়া হয় না তাই একটু কষ্টকর ও হয়ে যায়। কিন্তু তালের এই রস দিয়ে চমৎকার পিঠা তৈরি করা যায়।

আরো একটি পদ্ধতি হলো পানি দিয়ে কচলে কচলে রস বের করে নেওয়া।এজন্য প্রথমে কাঁচি দিয়ে তালের আটি থেকে আঁশ গুলো কেটে নিতে হবে।এরপর অল্প অল্প পানি ছিটিয়ে ভালো করে কচলে রস বের করে নিতে হবে। অতঃপর সম্পূর্ণ রস বের হয়ে এলে একটি পাতলা কাপড় দিয়ে ভালোভাবে ছেঁকে নিতে হবে।এই রস কিছুটা পাতলা হয় এবং এটায় আঁশের পরিমাণ খুব একটা থাকে না।এটি মূলত জ্বাল দিয়ে খাওয়ার জন্য বেশি উপযোগী।

আমি এবার প্রথম পদ্ধতি অবলম্বন করে তালের রস বের করে নিয়েছি।ঘন রসের সাথে পরিমাণমতো সুজি,চালের গুঁড়ো,ময়দা,চিনি, নারিকেল, লবণ মিশিয়ে ছোট-ছোট, গোল-গোল ফুলুরি তৈরি করা যায়।এছাড়া তালের কেক, তালের পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা, পাকন পিঠা, রসবরা পিঠা ইত্যাদিও এই ঘন রস দিয়ে খুব সহজে করা যেতে পারে।

.

আর পাতলা রস মূলত নারকেল দিয়ে চুলায় জ্বাল করে নেয়া হয়।এই রস চাল ভাজা, মুড়ি দিয়ে খেতে খুব ভালো লাগে।অনেকে আবার ভাতের সাথেও খেয়ে থাকেন।এটা যার যার অভিরুচি।তবে আমি তো এমনি এমনি খাই। আমার কাছে খুব ভালো লাগে।

তালের সিজনে তালের রস খাওয়া হবে না বা রসের পিঠা খাওয়া হবে না এটা তো হতেই পারে না।আপনারা যারা একেবারেই আনাড়ি তারা ও এই দুটি পদ্ধতিতে খুব সহজেই তালের রস নিতে পারবেন।তবে অনভিজ্ঞতার কারণে আপনাদের হয়তো সময় একটু বেশি লাগবে।কিন্তু খুব সহজেই পারবেন বলে মনে করছি।আর বাজারে এখনো পাকা তাল পাওয়া যাচ্ছে।