মিরার দুষ্টামি

in hive-120823 •  2 months ago 

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আজকে আমি এমন এক ঘটনার কথা শেয়ার করতে যাচ্ছি যা একদিকে যেমন মজার অন্যদিকে একটু চিন্তারও বটে। ছোট বাচ্চারা যখন হাঁটতে শেখে তখন যেন তাদের কৌতূহল আরো বেড়ে যায়। আর সেই কৌতুহল কখন যে আমাদের জন্য হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়ায়, কখন আবার অজান্তে আমাদের সমস্যায় ফেলে দেয় তা কেউই জানে না।

আজকে আমার মেয়ের এক কান্ড আমাকে একেবারে হতবাক করে দিয়েছে। দুপুরের দিকে আমি গোসল করতে গিয়েছিলাম। মেয়েকে তখন ঘরে একা রেখে গেছি ভেবেছিলাম তার বাবা তো বাসায় আছে, ঘুমাচ্ছে , কিন্তু মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় আর কতটা খেয়াল রাখতে পারে?এদিকে ঘরে ছিল আমার হাজবেন্ডের মানিব্যাগ, যেটা তিনি ভুল করে টেবিলে রেখেছিল। আমি একটু বেশি সময় নিয়েছিলাম গোসলে, কারণ গরমে একটু আরাম করে গোসল না করলে মনটাই ভালো থাকে না। অথচ আমি তখন জানতাম না, ঘরের ভিতর এক ছোট্ট দুরন্ত রাজকন্যা তার নতুন এক্সপ্লোরেশনে ব্যস্ত।

গোসল শেষ করে ঘরে এসে দেখি ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে এটিএম কার্ড, ব্যাংকের কার্ড কিছু খুচরা টাকা এবং সেই দৃশ্য দেখে আমার চোখ ছানাবড়া। একটা ১ হাজার টাকার নোট মাঝখান দিয়ে ছেরা, এমনভাবে ছিড়ে ছিড়ে যেন কোন রাগান্বিত মানুষ দুঃখে দুঃখে ছিরে ফেলেছে। আমি তখন এক দৌড়ে মিরার হাত থেকে বাকি টাকা গুলো সরিয়ে নেই। মিরার হাতে তখনও ছিল একটা ৫০০ টাকার নোট, যেটা সে ছিঁড়ে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
আমি তখন ঐ একটু ধমকের মতো করে বললাম, মিরা এটা কি করছো তুমি? অথচ তার মুখে কোন ভয় নেই উল্টো হাসছে।

বুঝতে পারলাম ওর কাছে এগুলো শুধু রঙিন কাগজের মত মনে হচ্ছে, যেগুলো দিয়ে খেলা করা যায়। শুধু এক হাজার টাকাই নয় এর আগেও ১০০ টাকা এবং একটা দশ টাকার নোটও ছিড়ে ফেলছে।যেগুলো এখনো ছেড়া অবস্থায় পড়ে আছে।আমি তখন আমার হাজব্যান্ড কে ডাকলাম, সে তখনও আধঘুমে, একটু বিরক্ত ভঙ্গিতে উঠে এসে বললো কি হয়েছে? আমি বললাম তোমার মানিবাগ থেকে মিরা এক হাজার টাকার একটা নোট ছিড়ে ফেলেছে। সব কার্ড বের করে ফেলেছে। তার মুখে কোন রাগ বা আশ্চর্য দেখা গেল না। আমার হাজব্যান্ড শুধু হালকা ভঙ্গিতে বলল তুমি তো দেখছিলে না মেয়েকে,দেখে রাখাটা উচিত ছিল তোমার। এটা তোমার দায়িত্ব।

এত দেরি করে গোসল করতে গিয়েছিলে কেন? আমি তখন একটু অবাক হলাম ঘটনাটা ঘটেছে মেয়ে আর এখন আমি দায়িত্বহীন হয়ে গিয়েছি। অথচ সে নিজেও তো ঘরে ছিল। এক মুহূর্তের জন্য মনটা খারাপ হয়ে গেল। যেন সব দোষ আমার ঘাড়ে এসে পড়ল। আমি ভাবলাম আমি তো মানুষ আমারও তো একটু নিজের সময় দরকার। আমি কি এমন কিছু করেছিলাম যে আমার দায়িত্ববোধ নেই। যাইহোক তবে পরে মনে হল ছোট্ট একটা মেয়ের ছোট্ট কান্ড। যেটা একদিকে টাকা নষ্ট করলেও অন্যদিকে আমাদের জীবনের এক অমূল্য স্মৃতি হয়ে থাকল। বেশ কিছুক্ষণ পর আমি এবং আমার হাজব্যান্ড দুজনেই হেসে উঠলাম এবং মেয়েকে আদরের ভঙ্গিতে বললাম এমনটা করো কেন আম্মু।

আমার হাজব্যান্ড মিরাকে বললো আম্মু তুমি বোঝনা এটা টাকা ছিঁড়তে নেই। হয়তো একদিন মিরা বড় হয়ে যখন শুনবে ছোটবেলায় সে এক হাজার টাকার নোট ছিড়ে ফেলেছিল এবং তখন সে নিশ্চয়ই হেসে গড়িয়ে পড়বে। হয়তো তখন আমরাও মজা করে বলবো তোমার হাতের কাজেই আমাদের সেদিন নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এই ঘটনার মাধ্যমে আমি আবারও শিখলাম ছোটদের কোন দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা তো বুঝেই না কি করা ঠিক আর কি করা বেঠিক। তাই আমাদেরকে একটু বেশি সচেতন হতে হবে। আর বিশেষ করে বাচ্চা যখন বাড়িতে থাকে তখন মানিব্যাগ টাকা কার্ড এসব জায়গা মত রাখা উচিত। পরিশেষে বলবো সন্তান মানেই দায়িত্ব কিন্তু সন্তান মানেই আনন্দ। এই আনন্দের মাঝে যদি এমন ছোট্ট ছোট্ট বিপত্তিও আসে তবুও এগুলোই একদিন হয়ে উঠবে আমাদের মিষ্টি স্মৃতি।

ধন্যবাদ সবাইকে এই গল্পটি পড়ার জন্য। আজ তাহলে এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...

আপনার গল্প পড়ে বেশ ভালোই লাগলো আসবে ছোট বাচ্চা তারা তো কিছু বুঝে না কোনটা ঠিক আর কোনটা সঠিক ৷

হয়তো বাচ্চা টি খেলনার কোন কিছু মনে করে টাকা গুলো ছিরে ফেলেছে ৷ আমি মনে করি এখানে বাচ্চাটির কোন দোষ নেই ৷

যাই হোক আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ৷ ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷

যাদের বাসাতে ছোট ছোট বাচ্চারা আছে তাদের বাসাতে এটা নরমাল ব্যাপার বলে আমার মনে হয়। আসলে বাচ্চারা তো সরল তারা এখনো টাকা চেনে না জানে না তাই এমনটাই করে থাকে। একটি সময় আসবে তারা এই টাকার মর্ম বুঝবে তখন দেখবেন আপনার মেয়ে আজকে যে টাকা ছিড়েছে সেই টাকা কি ভাবে যত্ন করে রাখে। যাই হোক গরমের দিনে আরাম করে গোসল করতে এগিয়ে আপনার মেয়ে একটি ছোট্ট দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে কি আর করার মেনে তো নিতেই হবে।