শীতের আমেজ নিয়ে খরস্রোতা নদীর পাশে কিছুক্ষণ
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏
ডিসেম্বর মাস, বছর শেষের ছুটি আর শীতের মিষ্টি আমেজ—এই সময়টাতে আমরা কয়েকজন মিলে বেরিয়ে পড়েছিলাম উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চলের উদ্দেশ্যে। শহরের কোলাহল, কাজের চাপ আর একঘেয়েমির বাইরে এসে একটু প্রকৃতির কোলে নিঃশ্বাস নেওয়ার ইচ্ছা দীর্ঘদিনের। ডুয়ার্সের দিকে যাওয়ার পথেই বুঝেছিলাম, এই যাত্রা শুধুই ঘোরার নয়, বরং আত্মার এক বিশ্রামের গল্প হয়ে থাকবে।
ডুয়ার্সে পৌঁছনোর কয়েকদিন পর আমরা রওনা দিলাম ভারত-ভুটান সীমান্তের দিকে, যেখানে পাহাড়ি নদী "জলঢাকা" তার নিজস্ব ছন্দে বইছে। গাড়ি ছুটছিল আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে, জানলার বাইরে সবুজ বন, মাঝে মাঝে ধোঁয়ার মতন মেঘ, আর দূরে উঁচু পাহাড়ের সাদা চূড়া আমাদের অভ্যর্থনা করছিল। যতই আমরা সীমান্তের দিকে এগোচ্ছিলাম, ততই প্রকৃতি যেন নিজের রূপ খুলে ধরছিল।
জলঢাকা নদীর কাছে পৌঁছনোর মুহূর্তটা ছিল একেবারে অপার্থিব। পাহাড় থেকে নেমে আসা সাদা জলের ধারা গর্জন করতে করতে নামছে সমতলের দিকে, যেন পাহাড়ের হৃদস্পন্দন ছড়িয়ে দিচ্ছে আশেপাশে। নদীর পাশেই একটি ছোট খোলা জায়গা ছিল, পাথরের উপর বসে আমরা সেই মুহূর্তের সান্নিধ্য গ্রহণ করলাম। হিমেল হাওয়া গায়ে এসে লাগছিল, আর জলের ধ্বনি যেন এক ধ্রুব সঙ্গীতের মতো আমাদের সমস্ত চিন্তা ধুয়ে দিচ্ছিল। সেখানে বসে আমি চোখ বন্ধ করে অনুভব করছিলাম – প্রাকৃতির এমন শক্তি, এমন প্রশান্তি খুব কমই অনুভব করা যায়।
সেই নদীর ধারে বসে চারপাশটা দেখছিলাম। একদিকে ঘন বন, অন্যদিকে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা চা-বাগান। দূরে দেখা যাচ্ছিল ভুটানের পাহাড়ি গ্রাম, সাদা পতাকা আর ছোট ছোট বৌদ্ধ স্তূপ, যা সীমান্তের ওপার থেকে যেন হাতছানি দিচ্ছিল। সীমান্তবর্তী এলাকায় এমন শান্তি আর সৌন্দর্য আমাকে অভিভূত করে দিয়েছিল।
এই স্থানেই আমরা এক ছোট টিনের ছাউনির দোকানে গিয়ে বসলাম। দোকানের পাশেই নদীর ধারা, আর সামনে পাথরের ওপরে বসে কিছু স্থানীয় মানুষ চা খাচ্ছেন। দোকানদার খুব আন্তরিকভাবে আমাদের অভ্যর্থনা করলেন। আমরা গরম গরম চা আর পাহাড়ের বিখ্যাত খাবার—মোমো অর্ডার দিলাম। যখন মোমো এসে পৌঁছল, তখন তার গরম ধোঁয়া, পাতলা ঝাল টমেটো চাটনি, আর দার্জিলিংয়ের চা – সব মিলিয়ে যেন স্বর্গীয় স্বাদ। এই সরল খাবারে পাহাড়ের ঐতিহ্য, স্নিগ্ধতা আর ভালোবাসা মিশে ছিল।
খাওয়া শেষ করে আবার নদীর কাছে গেলাম। এবার আমি একটু দূরে গিয়ে পাথরের ওপরে একা বসে রইলাম। সেই মুহূর্তটা আমার কাছে শুধুই প্রকৃতির সঙ্গে নয়, নিজের সঙ্গে একটি গভীর সংলাপের সময় ছিল। জলঢাকার ধারা, সীমান্তের ওপারে ভুটানের পাহাড়, আর আমার নীরব উপস্থিতি – সব মিলিয়ে আমি যেন নিজেকেই নতুন করে আবিষ্কার করছিলাম।
সেদিন বিকেলের আলো গা ছুঁয়ে যখন নামছিল, তখন আমাদের ফিরে আসার সময় হয়ে এসেছিল। কিন্তু মন যেন সেই নদীর ধারে থেকে যেতে চাইছিল। জলঢাকা নদী, ভারত-ভুটান সীমান্ত, পাহাড়ি মানুষদের সহজ জীবন আর প্রকৃতির অকৃপণ সৌন্দর্য—এই সবকিছু মিলে আমার জীবনে এক অমলিন স্মৃতি হয়ে থাকবে।
আজও যখন চোখ বন্ধ করি, মনে পড়ে সেই ছলা ছলা জলের শব্দ, হিমেল হাওয়া, আর এক কাপ গরম চা হাতে নিয়ে পাহাড়ের কোলে বসে থাকা নির্জন মুহূর্ত—যেখানে আমি প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলাম।
এখানে সেই ডুয়ার্স টুরের কিছু অসাধারণ ছবি আপনাদের সামনে রাখলাম। যদি ছবিগুলি এবং আমার বর্ণনা আপনাদের ভালো লাগে তবে কমেন্ট এর মাধ্যমে নিশ্চয় জানাবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জলঢাকা নদীর তীরে বেশ চমৎকার সময় কাটিয়েছে দেখছি। আমাদের চারপাশে এমন অপূর্ব সব দৃশ্য আছে যা সত্যিই চোখ জুড়িয়ে দেয়। কখনো আমার সুযোগ হলে এই জায়গাগুলো ঘুরে আসব। আমরা যারা কবি মনের অধিকারী তাদের জন্য এই ধরনের নির্জন জায়গায় অত্যন্ত মন কাড়া। খুব সুন্দর করে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছি ভালো লাগলো পড়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/KausikChak1234/status/1911024974275416257?t=6cD3KagMlkYtVNjcel5BAQ&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1911265090281648457?t=1F5UOV7YAZMPxO0h5FFbSg&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1911265615412605287?t=PGhg34wceSTjtY6ePtRN_w&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1911406624436080924?t=DnDI0xF2UWxoqJbK92wa6w&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1911407728318205974?t=UkN_W2v6UERVuSkLE6DOwA&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit