সূরা নাসর এর তাফসীর

in hive-129948 •  3 years ago 

quran-4178711.jpg

Copyright free image

সূরা নাসর এর তাফসীর

সূরা আন নাসর কুরআন কারীমের এক চতুর্থাংশের সমতুল্য।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উবাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেনঃ- সর্বশেষ কোন সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে তা কি তুমি জান?তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা, সূরা ইযাজাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু’ ( অবতীর্ণ হয়েছে সর্বশেষ।) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তখন বললেনঃ “তুমি সত্য বলেছো।” (এ হাদীসটি ইমাম নাসায়ী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, বলেন তিনি- আইয়ামে তাশরীকের (১১ই, ১২ইও ১৩ই যিল হজ্ব তারিখের) মধ্যভাগে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর অবতীর্ণ সূরা আন নাসর হলে বুঝতে পারেন তিনি যে, বিদায়ী সূরা এটা। সুতরাং তখনই তিনি সওয়ারী তৈরি করার নির্দেশ দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) সওয়ারীতে আরোহণ করলেন। তারপর তিনি তার সুপ্রসিদ্ধ খুৎবাহ প্রদান করলেন। (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর বাযার (রঃ) এবং হাফিয বারহাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যখন সূরা নাসর অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে ডেকে বলেনঃ “আমার পরলোক গমনের খবর এসে গেছে।” এ কথা শুনে হযরত ফাতিমা (রাঃ) কাঁদতে শুরু করলেন। তারপরই তিনি হাসতে লাগলেন।

তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে এর কারণ তিনি বলেনঃ পরলোক গমনের সময় “আমার আব্বার (সঃ)নিকটবর্তী হওয়ার খবর শুনে কান্না এসেছিল আমার । কিন্তু আমার কান্নার সময় তিনি আমাকে বললেনঃ “তুমি ধৈর্য ধারণ করে। আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে তুমিই সর্ব প্রথম আমার সাথে মিলিত হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে নাসায়ীতে এটা বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তাতে হযরত ফাতিমার (রঃ) উল্লেখ করা হয়নি) সূরা নাসের পারার ক্রম হচ্ছে ৩০।

সূরা নাসের পূর্ববর্তী (১১৩ নং সূরা) সূরা আল ফালাক এর সঙ্গে বিষয়বস্তুতে সাদৃশ্য রয়েছে। হাদিস শরীফে সূরা নাস ও সূরা ফালাক বারবার পড়ার জন্যে তাগিদ দিয়েছে। এই দুই সূরাকে এক সঙ্গে মুআওবিযাতাইন বলা হয়।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এ দুইটি সূরা তোমরা পড়তে থাক। কেননা, এ দুইটি সূরার মতো কোনো সূরা তোমরা কোনো দিন পাবে না। ’ (মুসলিম ৮১৪)

নাস শব্দের অর্থ মানব জাতি।মহান আল্লাহ তায়ালার মাহাত্ন্য বর্ণিত আছে প্রথম তিন আয়াতে এ সূরার । জ্বিন ও মানুষরূপী শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে মহান আল্লাহর কাছ থেকে আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া আছে আর পরের তিন আয়াতে ।

এ সূরায় আল্লাহ তায়ালার তিনটি সিফাত মানুষের পালনকর্তা, মানুষের অধিপতি, মানুষের উপাস্য উল্লেখ করা আছে। বাকি তিন আয়াতে শয়তানের অনিষ্ট হতে পানা চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

সূরা নাসর এর তাফসীর সূরা নাসর এর তাফসীর সূরা নাসর এর তাফসীরসূরা নাসর এর তাফসীর সূরা নাসর এর তাফসীরসূরা নাসর এর তাফসীর সূরা নাসর এর তাফসীর সূরা নাসর এর তাফসীর সূরা নাসর এর তাফসীরসূরা নাসর এর তাফসীর সূরা নাসর এর তাফসীরসূরা নাসর এর তাফসীর

একদা এক ইহুদী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের ওপর জাদু করেছিল। যার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরাঈল (আ.) মহানবী (সা.)-কে বলেন যে, এক ইহুদী তাকে জাদু করেছে এবং যে জিনিস দিয়ে জাদু করা হয়েছে তা একটি কুপের মধ্যে পাথরের নিচে আছে। মহানবী (সা.) সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করার জন্য লোক পাঠালেন। সেখানে গিয়ে কয়েকটি গিরা পাওয়া গিয়েছিল। তখন তিনি সূরা নাস ও ফালাক দুইটি একসঙ্গে পড়ে ফুক দেন এবং গিরাগুলো সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বিছানা থেকে ওঠেন।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়তেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন। (সহি বুখারি)

সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস প্রতিটি সূরা তিনবার করে ফজর আর মাগরিবে এই দুই ওয়াক্তে ফরজ সালাতের পর পড়া সুন্নত। অন্যান্য ফরজ সালাতের আদায় করে একবার করে এই তিন সূরা পড়তে হবে। (আবু দাউদ হা: ১৩৬৩)

সূরা নাস পড়লে শয়তানের অনিষ্ট ও যাদু থেকে হেফাজতে থাকা যায়। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস ও এই দুই সূরা ( সূরা ফালাক ও সূরা নাস) পড়বে সকাল-সন্ধ্যা, সে নিরাপদ থাকবে সকল বিপদ-আপদ থেকে । ’ (জামে তিরমিযী, হাদীস: ২৯০৩)

সূরা নাসর এর গুরুত্ব :

আপনি যদি বাংলায় ঘুমের দোয়া সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তবে এখানে ক্লিক করুন।

(১) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) একবার ওবায়দুল্লাহ বিন ওৎবা (রাঃ)-কে বলেন, কোন সূরাটি সবশেষে নাযিল হয়েছে কুরআনের জানো কি? ওবায়দুল্লাহ বললেন, জানি, সূরা নাসর। ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, ঠিকই বলেছ’ তুমি।[1]

(২) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, সূরাটি বিদায় হজ্জে আইয়ামে তাশরীক্বের মধ্যবর্তী সময়ে মিনায় নাযিল হয়। অতঃপর তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রসিদ্ধ ভাষণটি প্রদান করেন’ (বায়হাক্বী ৫/১৫২, হা/৯৪৬৪)।

(৩) ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, সূরাটি নাযিল হয় বিদায় হজ্জের সময় মিনাতে অত্র । অতঃপর একই সময়ে নাযিল হয় ইসলাম পরিপূর্ণ হওয়ার সেই বিখ্যাত আয়াতটি اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلاَمَ دِيْناً، ‘আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নে‘মতকে সম্পূর্ণ করলাম। আর তোমাদের জন্য আমি ইসলামকে দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)। এটা ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর ৮০ দিন পূর্বের ঘটনা। অতঃপর মৃত্যুর ৫০দিন পূর্বে নাযিল হয় কালালাহর বিখ্যাত আয়াতটি (নিসা ৪/১৭৬)। অতঃপর মৃত্যুর ৩৫ দিন পূর্বে নাযিল হয় সূরা তওবাহর সর্বশেষ দু’টি আয়াত-

لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ، فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ-

‘নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট যার উপরে কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু’। ‘এসত্ত্বেও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দাও যে, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তাঁর উপরেই আমি ভরসা করি। তিনি মহান আরশের অধিপতি’ (তওবাহ ৯/১২৮-১২৯)। অতঃপর মৃত্যুর ২১ দিন মতান্তরে ৭ দিন পূর্বে নাযিল হয় সূরা বাক্বারাহর ২৮১ আয়াতটি-

وَاتَّقُواْ يَوْماً تُرْجَعُوْنَ فِيْهِ إِلَى اللهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُوْنَ-

‘আর তোমরা ভয় কর ঐ দিনকে, যেদিন তোমরা ফিরে যাবে আল্লাহর কাছে। অতঃপর প্রত্যেকেই তার কর্মফল পুরোপুরি পাবে। আর তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৮১; কুরতুবী, সূরা নাসর।

উপরের আলোচনায় একথা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, সূরা নাসরকুরআনের সর্বশেষ পূর্ণাংগ সূরা হিসাবে বিদায় হজ্জের সময় নাযিল হয়েছে। এরপরে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন আয়াত নাযিল হলেও কোন পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হয়নি।

সূরা নাসর এর তাফসীর এর শেষ কিছু মন্তব্
আমাদের সূরা নাসর এর তাফসীর আপনাদের ভাল লেগেছে । আজকের পোষ্টিতে আপনারা সূরা নাসর এর তাফসীর,সূরা নাসর বাংলা উচ্চারণ, সূরা নাসর ইত্যাদি পেয়ে গেলেন । আমাদের লেখা যদি আপনাদের সত্যিই ভাল লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।।সূরা নাসর এর তাফসীর পোষ্টি ভাল লাগলে অবশ্যই একটা কমেন্ট করবেন কারন এটাই হলো আমার অনুপ্রেরনা..
পরবর্তীতে কী সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তা কমেন্টে জানাবেন।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আশা করি ভাল থাকবেন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আমার বাংলা ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।

আপনার পোস্ট খুবই সুন্দর হয়েছে, অনেক সুন্দর কিছু কথা তুলে ধরেছেন। তবে আমার বাংলা ব্লগে ব্লগিং করতে হলে শুরুতেই একটি পরিচিতিমূলক পোস্ট লিখতে হবে। শুরুতে পরিচিতি মূলক পোস্ট ছাড়া আমরা নিউ মেম্বার এর কোনো জেনারেল পোস্ট গ্রহণ করি না।
তবে
আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি তে এই মুহূর্তে নিউ মেম্বার নেয়া বন্ধ আছে।
আপনি আমাদের discord server এ জয়েন করুন। নিউ মেম্বার নেয়ার সঠিক সময় discord এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে ।
Discord link: https://discord.gg/5aYe6e6nMW

আরো কিছু জানতে ফলো করুন, আমার বাংলা ব্লগের নিয়মাবলীর সর্বশেষ আপডেট।

👉https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-29-sep-21