আধুনিকতার আড়ালে হারাতে না চাওয়া এক ঐতিহ্য

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

🥰...এবং হিন্দু ভাই বোনদের কে আদাব.💗🙏।আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ? আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন নতুন সদস্য, এই প্লাটফর্মের সাথে দীর্ঘ কয়েক মাস আগে যুক্ত হয়েছি। সত্যি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যুক্ত হতে পেরে আমার কাছে অনেক ভালো লাগতেছে ।আজকে আমি আপনাদের সাথে আধুনিকতার আড়ালে হারাতে না চাওয়া এক ঐতিহ্য শেয়ার করবো । আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

চারদিকে প্রযুক্তির দাপট, ছোট বড় সব কাজেই মেশিনের ব্যবহার, কৃষিকাজও বাদ যায়নি তার ছোঁয়া থেকে। তবে বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে আজও এমন দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে আধুনিকতার ছায়া গিয়েও থমকে দাঁড়ায়। ধান কাটার মৌসুমে কৃষকেরা মাঠ থেকে ধান কেটে ঘরে আনে, তারপর উঠোনে বা খোলা জায়গায় সেই ধান মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয় সম্পূর্ণ হাতে, সেই প্রাচীন পদ্ধতিতে। কাঠের মাড়াই মেশিন, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ধান আলাদা করা, পায়ের নিচে দলাই করা সবকিছুতেই মিশে থাকে পরিশ্রম, ধৈর্য আর প্রাচীন অভ্যাসের গন্ধ। তাঁরা এখন পর্যন্ত প্রাচীন কালের সেই সব কার্যক্রম কে ভুলতে পারেননি। তাঁরা আধুনিক যুগে এসেও প্রাচীন কালের সেই কাঠের তৈরি করা ধান মাড়াই করা যন্ত্র ব্যবহার করছেন।

যেখানে একদিকে ধান কাটার বা মাড়াইয়ের মেশিন সহজলভ্য, সেখানেও অনেক কৃষক তাদের বাপ দাদার শিখিয়ে যাওয়া পদ্ধতিতে কাজ করে যেতে ভালোবাসে। হয়তো এতে সময় বেশি লাগে, পরিশ্রমও বেশি, কিন্তু তাতেই তারা খুঁজে পায় আত্মার শান্তি, তাদের নিজের মাটির সঙ্গে বন্ধন। মেশিনের শব্দ যেখানে সম্পর্কহীন এক কার্যকারিতা ছড়ায়, এই হাতের খাটুনি সেখানে শোনায় গল্প, মানুষের গল্প। তাঁরা পরিশ্রম করতে একটু বেশি ভালোবাসেন।আর তাদের বাপ দাদার দেয়া ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন, এটা আমাদের জন্য একটা বড় পাওয়া। আমরা বর্তমান যুগের ছেলে মেয়েরা তাদের মাধ্যমে প্রাচীন কালের ঐতিহ্য দেখতে পারছি।

আরেকটি বিষয় হল এই হাতে করা কাজগুলো একসঙ্গে অনেকের মিলিত শ্রমে হয়, যেখানে মেশিন থাকলে মানুষ ছাড়া কাজও চলে। ফলে এক ধরনের সামাজিক বন্ধন তৈরি হয়, গ্রামের উঠোনে ধান মাড়াই মানে শুধু কাজ নয়, হাসি, গল্প, আর একসঙ্গে সময় কাটানো। এই পারিবারিক বা পাড়া-প্রতিবেশীর সহায়তা আর মিলেমিশে কাজ করার আবহটাই গ্রামবাংলার এক বড় রূপ। ছোট বেলায় আমি আমার দাদার কাছে থেকে শুনেছিলাম যে, যখন তাঁরা‌ ধানের কাজ গুলো করতেন, তখন তাদের এই ধানের কাজ গুলো দেখার জন্য পুরো গ্ৰামের মানুষ এসেছিল।আর তখন সকলেই গল্প গুজব করে কাজ গুলো সম্পন্ন করতেন। এটি ছিল তাদের বড় একটি ঐতিহ্য।

আরেক দিকে, প্রাচীন পদ্ধতিতে কাজ করার মধ্যে থাকে প্রকৃতির সঙ্গে এক সরাসরি যোগাযোগ। কৃষকেরা আকাশের রং দেখে বুঝে কাজ শুরু করে, বৃষ্টির সম্ভাবনা হিসাব করে ধান মাড়াইয়ের সময় ঠিক করে, বাতাসের দিক বুঝে ধান শুকানোর ব্যবস্থা নেয় , যা আধুনিক যন্ত্রের নিয়মমাফিক কাজ থেকে ভিন্ন, অনেক বেশি প্রাণের ছোঁয়া রাখা। এ যেন প্রকৃতির পাঠশালায় শিখে নেওয়া এক বাস্তব অভিজ্ঞতা, যা বইয়ের পাতায় মেলে না।তারা জীবনে কখনোই স্কুল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই সব বিষয়ে পড়াশোনা করেননি, তবুও তারা এই সব বিষয়ে খুবই সুন্দর ভাবে জানেন এবং বুঝেন। আমাদের দেশের প্রতিটি কৃষক এই সব বিষয়ে বেশ অভিজ্ঞ। তাঁরা যদি কৃষি নিয়ে অল্প কিছু পড়াশোনা করতেন তাহলে তারা আরো অনেক দুরে এগিয়ে যেতেন।

তাই প্রযুক্তি যতই বদলাক, কিছু মানুষ, কিছু কাজ, আর কিছু গল্প সেই প্রাচীন ধারা নিয়েই সামনে হাঁটে কারণ তাতে লুকিয়ে থাকে বাংলার রূপ, বাংলার ভালোবাসা। মাটি আর মানুষের এই সম্পর্ক শুধু উৎপাদনের হিসাব-নিকাশে থেমে থাকে না, এর মধ্যে মিশে থাকে এক গভীর মানসিক বন্ধন। প্রতিটি ধানকাঠি যেন কেবল ফসল নয়, তা হয়ে ওঠে কৃষকের স্বপ্ন, আশা আর বছরের পর বছর ধরে বয়ে আনা সংগ্রামের প্রতীক। প্রাচীন পদ্ধতিতে ধান মাড়াই শুধু এক টুকরো কাজ নয়, এটি এক টুকরো ইতিহাস, যা বয়ে চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।যখন এক বৃদ্ধ কৃষক নিজের হাত দিয়ে ধান মাড়ায়, তখন সেখানে থাকে তার ছোটবেলার শিখে যাওয়া অভ্যাস, বাবার হাতে শেখা কৌশল, এমনকি হয়তো সেই ধানক্ষেতের পাশেই কাটানো কৈশোরের স্মৃতি।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।