নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন ।আজকে আমি আপনাদের সাথে নববর্ষের আলপনা দেওয়া নিয়ে কিছু ঘটনা শেয়ার করব।
গতবারেও নববর্ষের সময় পোস্টে আমি শেয়ার করেছিলাম আলপনা দেওয়া নিয়ে। আমি জানিয়েছিলাম আপনাদের যে আমাদের কৃষ্ণনগরে একটি সোসাইটির উদ্যোগে কৃষ্ণনগরে আলপনা দেওয়া হয়। বিশেষ করে নববর্ষ উপলক্ষে নববর্ষের আগের দিন ওরা আলপনা দিয়ে থাকে। রাস্তা সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে মোটামুটি ৬০-৭০ জন মিলে এই আলপনার উদ্যোগ নেয়।
প্রথম যখন আমাদের কৃষ্ণনগর স্টেশনের চত্বরে এরা আলপনা দিয়েছিল ,তখন এদের ভিডিও থেকে শুরু করে ছবি এবং এই সোসাইটির নাম ভাইরাল হতে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারপর থেকে সাধারণ মানুষও এদের পাশে এগিয়ে আসে এবং এদের সাহায্য করতে থাকে যাতে এরা ঠিকঠাকভাবে রাস্তায় আলপনা দিতে পারে।
নববর্ষ উপলক্ষে আগের বছর ঘুর্নি পুতুল পট্টি অর্থাৎ যেখানে আমার বাড়ি ,সেখানে এরা আলপনা দিয়েছিল। সেবার পুতুল পট্টি এদের হাতের অপূর্ব সুন্দর শিল্পকলায় ফুটে উঠেছিল। সারারাত জেগে, ছোট ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়রাও আলপনা দেয় এবং আমাদের ঘূর্ণি পুতুল পট্টি এলাকার সকলে তাদেরকে সাহায্য করে। আমার বাবা এবং সুবির জেঠু পুতুল পট্টির এই ক্লে সোসাইটির সেক্রেটারি। তাই তাদের কাছ থেকে সাপোর্ট পেয়ে ওরা খুব ভালোভাবে আলপনা দিতে পেরেছিল।
রাস্তায় আলপনা দেওয়া সত্যিই সহজ কথা নয়। কারণ রাস্তাঘাটে যানবাহন চলতেই থাকে। সবাইকে আটকে রেখে এইভাবে আলপনার উদ্যোগ গ্রহণ করা, অত বড় রাস্তা জুড়ে, অত বড় বড় আলপনা আঁকা। একার পক্ষে যেমন সম্ভব নয়, দলগতভাবে কাজটা করতে পারা একটা বিশাল বড় ক্ষমতা বলে আমার মনে হয়। চারুকলা সোসাইটির হাত ধরেই এই আলপনার কার্যক্রম প্রতিবছর হয়ে থাকে।
উদ্যোগ
এ বছর যখন ওরা আলপনা দেওয়ার কথা আবার ঠিক করে আমাদের ঘূর্ণি পুতুল পট্টি এলাকায়,তখন আমার বাবা এবং জেঠু মিলে ঠিক করে ছেলেমেয়েদের আরো উৎসাহ দেয়ার জন্য এবং যারা আলপনা দিচ্ছে তাদেরকে আরো উৎসাহ দেয়ার জন্য তাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করবে।
সেই মতো ওরা আগের দিন সকলের জন্য অর্থাৎ যারা আলপনা দিচ্ছে তাদের সকলের জন্য টোটাল 60 থেকে 70টা সার্টিফিকেট তৈরি করে। এবং এই সার্টিফিকেটটা দেও য়া হয় আমাদের ঘূর্ণি ক্লে সোসাইটির তরফ থেকে। সার্টিফিকেট রেডি হয়। এর সাথেই বাবা জেঠুরা ব্যবস্থা করে এদের খাওয়া-দাওয়ার। রাত জেগে যেহেতু এরা আলপনা দেবে ,তাই টিফিনের ব্যবস্থা যেমন করা হয় ,তার সাথে ব্যবস্থা করা হয় রাতের খাবারের।
এর সাথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মুক্ত মঞ্চ অর্থাৎ রাস্তার পাশেই মাইক এর ব্যবস্থা ।সমস্ত কিছু করা হয় যাতে যারা যারা গান গাইতে অথবা কবিতা পাঠে আগ্রহী ,সেখানে যেন তারা সেটা করতে পারে। এতে যেমন পয়লা বৈশাখে নববর্ষের দিন পালন করা হবে। তার সাথে যারা আলপনা দিচ্ছে তাদেরও কেউ উৎসাহ দান করা হবে।
সেইমতো আমারও কথা ছিল ওখানে গান গাওয়ার। আসলে পুতুল পট্টির মোড়ের মাথাতেই আমাদের দুটো শোরুম রয়েছে। তাই সব কিছু ব্যাবস্থা করতে অসুবিধা হয়নি।
বৃষ্টির প্রকোপ
আমি সন্ধ্যেবেলা থেকেই কাজ করছিলাম এবং আমার মাথাতে ছিল যে একটা টাইমে ওখানে গিয়ে আমাকে গান গাইতে হবে। এমনকি আমি যে দুটো গান গাইব ,সেটাও আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম। ওরা সন্ধে ছটা থেকে আলপনা দেয়া শুরু করেছিল। আমি শুনেছি ওখানে রীতিমত ৪/৫ জন গানও করেছে। দু তিন জন কবিতা পাঠ করেছে। তাদেরকেও টিফিন দেয়া হয়েছে এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার জন্য।
এরকম হতে হতে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ হট করেই ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয় ,আমরা ভাবতেই পারিনি ঝড় আসতে পারে। খুব স্বাভাবিকভাবে ঝড় আসার সাথে সাথে চারিদিক ধুলোবালি উড়তে থাকে। আর এসব বলতে বলতেই বৃষ্টি ঝমঝম করে নামে। আমি বাড়িতে ছিলাম। আর বাড়িতে থেকেই আমার চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।
কারণ আমি জানি ওরা সন্ধ্যেবেলা থেকে আলপনা দেওয়া শুরু করবে,এত তাড়াতাড়ি আলপনা শুকানোর কথা নয়। এমনকি ওদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং একদিকে রান্নাও হচ্ছে। তাহলে ওখানে হচ্ছে কি, সেটা আমি বুঝতে বাকি রাখলাম না। বৃষ্টির কারণে যে সমস্ত কিছু নষ্ট হয়ে গেল ,সেটা বুঝতে পারলাম।
বাবাকে ফোন করে জানতে পারলাম যেখানে রান্না হচ্ছিল ,সমস্ত কিছু উঠিয়ে নিয়ে দোকানের মধ্যে রাখতে হয়েছিল। আর ছেলেমেয়েরা স্বাভাবিকভাবেই আশেপাশের দোকান গুলোর মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। আর আলপনা যেগুলো শুকিয়ে গিয়েছিল, সেগুলো তো ঠিক ছিল, কিন্তু যেগুলো সদ্য শুরু করেছিল করতে,সেগুলো বৃষ্টির জলে পুরোপুরি ধুয়ে যায়। বৃষ্টি এতটা জোরেই হচ্ছিল যে কোন কিছুই আটকানো গেল না। সমস্ত অনুষ্ঠান সমস্ত কিছু বাতিল হয়ে গেল।
সবার মন খারাপ হয়ে গেল। বৃষ্টি থামার পরে সকলে খাওয়া দাওয়া করেছে ঠিকভাবে। তবে আলপনা দেওয়া আর হলো না নববর্ষের আগের দিন। ছেলেমেয়েরা সবাই বাড়ি চলে গেল মন খারাপ নিয়ে। বাবাও বাড়ি চলে আসলো। সবার মন খারাপ কারণ যেভাবে সবাই ভেবেছিল সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
নতুনভাবে কাজের উদ্যোগ
গতকাল ছিল নববর্ষ। সবাই মিলে আবার ঠিক করেছিল যেহেতু আগের দিন কাজটা সম্পন্ন হয়নি ,তাই নববর্ষের দিন করা হবে। সন্ধ্যেবেলা থেকে যেহেতু সকলে হালখাতার ব্যাপার নিয়ে ব্যস্ত থাকবে ,তাই রাত ন'টা থেকে ওরা আলপনা দেওয়া শুরু করবে। তাই গতকাল সারারাত ওরা আলপনা দিয়েছে। আমার বাবা যখন বাড়ি আসলো তখন বাজে রাত তিনটে। রাত তিনটে অব্দি সকলে আলপনা দিয়েছে এবং খাওয়া দাওয়া করেছে, সাথে সকলকে সার্টিফিকেটও দেয়া হয়েছে। তবে গতকাল মাইকের কোন আয়োজন করা হয়নি।
আজকে সকাল বেলায় স্কুলে আসার সময় রাস্তার এত সুন্দর আলপনা দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম। কি অপূর্ব হাতের কাজ। ছবিতে বোঝা যাচ্ছে না ,কিন্তু রাস্তা দিয়ে যখন হাঁটছি দেখতেও ভালো লাগছে। পুতুলপট্টি কি অপরূপ সাজে সেজে উঠেছে নববর্ষে। যেমনটা আমরা সবাই চেয়েছিলাম, সেটা সম্ভব না হলেও পরের দিন ওরা আবার উদ্যোগ নিয়ে যে এই কাজটা সম্পূর্ণ করতে পেরেছে, এটাই অনেক।
গতবারে আমি খুব নিখুঁতভাবে প্রত্যেকটা ছবি তুলে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরেছিলাম। কিন্তু গতকাল থেকে এত হুটোপাটার মধ্যে আছি সেটা সম্ভব হয়নি। তাই আজকে স্কুলে আসার সময় যে কটা ছবি তুলতে পেরেছি ,তাই নিয়েই পোস্ট লিখলাম। আজ এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকুন।
Curated by: @ahsansharif
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গতবারেও আপনি আলপনা নিয়ে আমাদের সাথে আপনার মনের অনুভূতি শেয়ার করেছেন তবে এইবার আপনারা অনেক বেশি ভালোভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং রাস্তার মধ্যে নববর্ষের আলপনা অংকন করা শুরু করেছেন তবে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল যাই হোক শুভ নববর্ষ আপনার আগামী দিনের পথ চলা অনেক বেশি সুন্দর হোক এটাই কামনা করেছে ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
wow that looks so beautiful, thanks for sharing.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
নববর্ষের আগের দিন বাচ্চাগুলো সবজি খুব সুন্দর আলপনা দিচ্ছিল আমিও বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম দেখছিলাম। আবার সকলে উদ্যোগ নিয়ে তাদের টিফিন দেওয়া জল দেওয়া বিষয়গুলো দেখে আরো ভালো লাগল। তবে ঝড় বৃষ্টির জন্য তাদের সেই দিন হয়তো আলপনা আঁকা কমপ্লিট করে উঠতে পারিনি। আমিও ভেবেছিলাম রাতে খাবার শেষ করে তারপরে পুরো কমপ্লিট আলপনা আঁকা দেখতে যাব। কিন্তু ঝড় বৃষ্টিতে সব কিছু ভেস্তে দিয়েছিল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit