স্কুল থেকে প্রাপ্তি

in hive-120823 •  19 days ago 

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে আমার স্কুলে কাটানো একটি মুহূর্ত নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।

20250411_153719.jpg

আমাদের স্কুল এ টিচিং ট্রেনিং শুরু হয়েছে 19/2/2025 থেকে । তারপরে মোটামুটি এক সপ্তাহ পর আমার হাতের সমস্যার কারণে আমি অনেকদিন ছুটিতে ছিলাম। অর্থাৎ প্রথম দিকে আমি মাত্র এক সপ্তাহ স্কুলে গিয়েছিলাম।এমনকি মার্চ মাসের বেশ অনেকটা দিন আমি রেস্টে ছিলাম। তারপরে যখন আবার অ্যাটেন্ড করলাম রং দোল পার হয়ে যাওয়ার পর, তখন আবার চারদিন মতন স্কুল অ্যাটেন্ড করেছিলাম।

ওই সময়তেই হেডমিস্ট্রেস আমাকে ডেকে বলল ঈশা তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের ফিট সার্টিফিকেট শো করছ, ততদিন পর্যন্ত স্কুলে জয়েন করাটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না ।তুমি আসছো ঠিকই, কিন্তু তোমার পুনরায় জয়েনিং এর জন্য ডাক্তারের ফিট সার্টিফিকেট প্রয়োজন। তাই তুমি এবার সার্টিফিকেট নিয়ে জয়েন করো, এখনকার মতো তুমি আরেকটু রেস্ট নিয়ে নাও। কারণ তোমার হাতের সমস্যা বেড়ে চলেছে। সত্যিই সেই সময় আমার হাতের সমস্যা প্রচন্ড বার ছিল। আমি কোনরকম ডাস্ট চকের গুঁড়ো ধরতে পারছিলাম না।

1000235395.jpg

এই কথাটা শুনে আমার যা ব শান্তি হয়েছিল, তা আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না । আমার প্রচন্ড সমস্যা হলেও আমি কিছুতেই লিভ নিতে পারছিলাম না। কারণ অলরেডি আমি বেশ অনেকটা সময় লিভ নিয়ে নিয়েছিলাম। যখন হেডমিস্ট্রেস নিজে থেকে বললেন , তখন সত্যিই আমি অনেক শান্তি পেলাম।

মার্চ এর ১১ তারিখে আমি আবার স্কুলে জয়েন করি। ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিয়ে এবং সেখানে স্পষ্ট ভাবে লেখা ছিল আমি ফিজিক্যালি ফিট আছি।

স্কুল জয়েন করার দিন ছিল শুক্রবার। অনেকদিন পরে সবার সাথে দেখা। স্কুলে ঢুকেই দেখলাম সকলে মিলে একটা খেলা খেলছে। মর্নিং এসেম্বলি হয়ে যাওয়ার পর,হুলা হুপ খেলছে সবাই। আমাদের স্কুলে চারটে গ্রুপ আছে। গ্রুপগুলোকে এক একটা হাউস বলে ডাকা হয়। রেড হাউস, ইয়েলো হাউস ,গ্রীনহাউস এবং ব্লু হাউস।

প্রত্যেকটা হাউসের স্টুডেন্টরা আলাদা আলাদা ভাবে লাইন করে দাড়ালো। আর তারপর হূপ নিয়ে খেলা শুরু হল। সবশেষে ইয়েলো হাউস জিতেছে। এই খেলাটা আমি আপনাদের এক্সপ্লেইন করে বোঝাতে পারবো না। কারণ আমার কাছে ছবি নেই। মর্নিং অ্যাসেম্বলিতে আমরা টিচাররাও ফোন নিয়ে যেতে পারতাম না। এ কারণেই ছবি তুলে রাখতে পারিনি। শুধুমাত্র যেদিনকে অ্যাসেম্বলির প্রজেক্ট করার জন্য আমাদের পারমিশন দেয়া হয়েছিল সেদিনকেই আমরা ফোন নিয়ে গিয়েছিলাম।

20240920_102904.jpg

সাইকোলজিস্ট বান্ধবীর আগমন

যাইহোক খেলার শেষে চলে আসলাম আমাদের রুমে। টিচার্স দের যেমন স্টাফ রুম থাকে ,আমাদেরও আলাদা করে একটা রুম দেয়া হয়েছিল ,আমাদের ১০ জনকে। আমরা সেখানে সমস্ত কাজ করছিলাম। হঠাৎ করে দেখি আমাদের এক বান্ধবী এসে হাজির। সে এখন সাইকোলজিস্ট। সেও এই স্কুলেরই ছাত্রী। আমাদের ব্যাচের।এই স্কুলে সে একটা সার্ভের কারণে এসেছে এবং সে মোটামুটি তিন ঘন্টা ধরে সার্ভে করবে স্কুলে। ওর নাম সপ্তপর্ণী পোদ্দার। ও এখন সাইকোলজি নিয়ে রিসার্চ এর দিকে এগোচ্ছে।

20250411_151457.jpg

লাল রঙের কুর্তিতে যে মেয়েটি

যাই হোক টিফিন পিরিয়ড এর আগে দুটো পিরিয়ড ও সকল স্টুডেন্ট কে নিয়ে হল ঘরে বসে পড়ল এবং সকলের হাতে একটা করে জেরক্স সিট দিয়ে দিল। আমরা টিচাররাও এটেন্ড করতে পারলাম। ওখানে নানান ধরনের কোশ্চেন ছিল এবং সেগুলোকে টিক মারতে হবে। যেটা ব্যক্তিগতভাবে আমরা করে থাকি অথবা আমার বৈশিষ্ট্য ,সেগুলোই ওখানে কোশ্চেনে টিক মেরে সিলেক্ট করতে হবে।। ও এক এক করে সব কোশ্চেন বুঝিয়ে দিতে লাগলো আর আমরা ঠিক মারতে লাগলাম।

ওর সার্ভেতে অ্যাটেন্ড করতে পেরে আমাদের সকলের ভালো লেগেছে। এমনকি ও এখন সেশানেও শুরু করেছে ।ওর বাড়িতেই চেম্বার খুলে। আমরা ওকে রীতিমত ধরে ওর কাছ থেকে নানান রকম প্রশ্ন করতে শুরু করলাম ,এবং ভবিষ্যতে দরকার পড়লে অবশ্যই ওর কাছেই যাব এটা কথা দিলাম। ও আমাদের বেশ কাছের বন্ধু ।তাই একটা বন্ধুর কাছে সব বলতে পারা সত্যিই সহজ। মাঝে একটা সময় আমার প্রচন্ড পরিমাণে মনে হচ্ছিল আমি একটা সাইকোলজিস্ট এর সাথে কথা বলি, তখন ওর কথা একবার ভেবেছিলাম, কিন্তু ওর সাথে যোগাযোগ হয়নি। এবার যোগাযোগ হয়ে ভালোই হলো।

একটা মানুষ পাগল হলে যে সাইকোলজিস্ট এর কাছে যায়, সেটা ভুল কথা। সাইকোলজিস্ট এর ব্যাপারটা একদমই আলাদা । এখানে কোন পাগলের বিষয়বস্তু নেই।এই বিষয় নিয়ে অন্যদিন আলোচনা করব।

বিরাট সৌভাগ্য

যাই হোক তারপর হঠাৎ করে দেখি আমাদের ডাকা হল এবং এঁচোড় দেয়া হল সবাইকে। সাথে দুটো করে গন্ধরাজ লেবু। স্কুলের গাছের এঁচোর পাওয়া, এত বিশাল বড় ভাগ্যের ব্যাপার !

20250412_143439.jpg
স্কুলের গাছের গন্ধরাজ লেবু

ছোটবেলায় স্কুলের গাছ থেকে কত বাতাবি লেবু চুরি করেছি। ব্যাগ এমনিতেই বই বোঝাই হয়ে থাকতো, বইয়ের ভারে কাঁধ ভারি হয়ে যেত, তার মধ্যে করেও বাতাবি লেবু চুরি করে নিয়ে বাড়ি যেতাম। ছুটির সময় যখন সবাই বেরিয়ে যেত ,আমরা কিছু বান্ধবী বাতাবি লেবু গাছটা থেকে লেবু চুরি করতাম ,এছাড়াও আম চুরি করা, সে তো লেগেই ছিল। তবে হাসির কথা হলো ,আমি কিন্তু বাতাবি লেবু খেতে ভালোবাসি না। মজাতে এসব করতাম।
আর এখন আমাদের দেখে এগুলো দেওয়া হচ্ছে, ভাবা যায়!?

20250412_122922.jpg
এঁচোর

তবে আমাদের স্কুলে প্রত্যেক বছর যখনই আমের সময় হত, তখন সকল স্টুডেন্টকে আম দেয়া হতো, প্লাস কাঁঠাল দেয়া হতো। স্টুডেন্টদের কাঁঠাল এর কোয়া ভেঙে দেয়া হতো ,আর আম দেওয়া হতো দুটো থেকে চারটে করে। স্কুলে প্রচুর গাছ আছে, এ কারণেই আমরা সকলে এটা পেতাম। যদিও অনেক স্কুলে এ সমস্ত কিছু দেয় না ,তবে আমাদের টিচার স্টুডেন্ট সকলকে আমাদের হেড মিস্ট্রেস এগুলো দিত, এখনো দেয় দেখে ভালো লাগলো।

কতদিন পরে স্কুলের গাছের গন্ধরাজ লেবু আর এঁচোড় নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি, এ ভেবেই ছোটবেলাকার কথা মনে পড়ে গেল।

ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম

IMG-20250412-WA0024.jpeg

জিবনেসিয়াম এ সেদিন আমাদের একটা লাইভ ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম এর আয়োজন করা হয়েছিল। এখানে বসে সকল ছাত্র-ছাত্রী টিফিনের পরের দিকে সেই প্রোগ্রাম এটেন্ড করতে গিয়েছিল। আমাদেরও ডাকা হয়েছিল বলে আমরাও গিয়েছিলাম। আমি একটু দেরি করেই যাচ্ছিলাম। আমার কিছু কাজ ছিল বলে। যাওয়ার পথে দেখি কুরচি ফুলের গাছটা কি সুন্দর উঁকি মেরে আছে। এই কুরচি কে নিয়ে আমার একটা লেখা কবিতা আছে। কুরচি ফুলের অসাধারণ গন্ধ আমার মনটা হালকা করে দিচ্ছিল।

20250412_123701.jpg
কুরচি ফুলের গাছ

যাইহোক প্রোগ্রামটা এটেন্ড করার পর ছুটির ঘন্টা পড়ে গেল আর আমি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। তখন মনে করে আপনাদের জন্য নীল কৃষ্ণচূড়ার ফুলের একটা ছবি তুলে রাখলাম। ফুলগুলো হাওয়ায় নিচে পড়েছিল।। এই অবস্থায় ছবি তুলেছি, শুধুমাত্র রংটা বোঝানোর জন্য।

20250412_104149.jpg
নীল কৃষ্ণচূড়া

ফেরার পথে আমার পহেলা বৈশাখের জন্য জামা কেনা হলো। আমি নিজেই একা জামা কিনলাম। তারপর বাড়ি চলে আসলাম।আজ এখানেই শেষ করছি । সকলের সাথে অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে পেরে আমারও খুব ভালো লাগলো।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...
Loading...