ফেলে আসা স্মৃতি (ভোরবেলায় আম কুড়াতে যাওয়ার মজা)

in hive-120823 •  5 days ago 

নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে নতুন একটি গল্প শেয়ার করার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।

আমরা যারা গ্রাম বা শহরের অন্তর্গত ছোটো ছোটো পাড়ায় বড়ো হয়েছি তাদের শৈশব টা কিন্তু শহরের চার দেয়ালের মধ্যে বড় হওয়া বাচ্চাদের থেকে অনেকটাই ভিন্ন ছিল। আমরা বিকেলবেলা সব বাচ্চারা মিলে হৈ-হুল্লোড় করে খেলাধুলা করা থেকে শুরু করে, পুকুরে স্নান করা, গরমের দিনগুলোতে রাতে কারেন্ট চলে গেলে এক জায়গায় বসে গল্প করা কিংবা লুকোচুরি খেলা----এই সবই আমরা করেছি।

তবে এই সব কিছুর মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দের ছিল আম ও লিচুর সময়ে ভোরবেলা উঠে বাগানে আম ও লিচু কুড়াতে যাওয়া। এ যে কি মজার একটা কাজ ছিল কি বলবো। যদিও আম কিংবা লিচু কোনটাই আমি খেতে খুব পছন্দ করতাম না তবে কুড়াতে যাওয়ার মধ্যে এক স্বর্গীয় আনন্দ পেতাম। তাই প্রত্যেকদিন ভোরবেলায় হালকা অন্ধকার থাকতেই ঘুম থেকে উঠে একটা ব্যাগ নিয়ে চলে যেতাম পাশের বাগানে। সত্যি কথা বলতে এখন যদি আমাকে কেউ বলে ওই ভোরবেলায় একা বাগানে যেতে তাহলে হয়তো দুইবার ভাববো, নানা রকম ভয়ের কথা হয়তো মাথায় আসবে। তবে সেই সময়টা এমনই ছিল যে এইসব ভয় টয় কিছু পেতাম না। আমার দাদা আবার এইসব পছন্দ করত না। তাই আমি একাই প্রত্যেকদিন ভোরবেলায় বাগানে চলে যেতাম। তারপর যেগুলো কুরিয়ে আনতাম সেগুলো কিন্তু দাদাই খেত। আর বেশীর ভাগ দিনই এমন হতো যে লিচু বাগানে আমিই প্রথম যেতাম। তাই অনেক লিচু কুড়িয়ে আনতাম। তবে সেসব খেয়ে শেষ করতে পারতাম না। তাই মা অর্ধেক সকলকে দিয়েই দিত। তবুও ভোর বেলায় আম লিচু কুড়াতে যাওয়া ছাড়িনি।

1000251442.jpg

এবার এই আম পুরনোর এক মজার ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করব। তবে এখন যে বাগানের কথা বলব শুধু সেই বাগানটাতেই যেতে আমি ভয় পেতাম।

তখন আমি ক্লাস থ্রি তে পড়ি, দাদা তখন পড়ে ক্লাস ফাইভ এ। সেই সময় আমরা যে বাড়িটিতে ভাড়া থাকতাম সেই বাড়ির সামনেও এক মস্ত আম বাগান ছিল। তবে ওই আম বাগানে একা যেতে আমি খুব ভয় পেতাম। কারণ ওই আম বাগান নিয়ে বহু গল্প প্রচলিত ছিল। তবে সেখানে প্রচুর আমগাছ থাকায় অনেক আম পড়তো। তাই আমি প্রতিদিন কিছু মানুষ আম বাগানে ঢুকলে তারপরে যেতাম। তবে একবার ইচ্ছে হলো সবার প্রথমে আম বাগানে যাব। তবে ওই আমবাগানে একা যাওয়ার সাহস তো আমার ছিল না। তাই ভাবতে লাগলাম কি করা যায়...

তারপর দাদাকে কোনো মতে রাজি করিয়ে নিলাম। পরের দিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ আমরা দুজনে সেই আম বাগানের সামনে গেলাম। তখনো বাগানে কেউ আসেনি। চারিদিকে ঘুটে ঘুটে অন্ধকার। দূরে ল্যাম্পপোস্টে মিটিমিটি আলো জ্বলছে। সেই আলোয় আমবাগানের কিছুটা অংশ হালকা আলোকিত হয়ে আছে। সেই আলোতে আমরা দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি মাটির উপরে প্রচুর গোল গোল আম পড়ে আছে। আমি বারবার দাদাকে বলছিলাম, "বাগানের মধ্যে চল, ওই দেখ কত আম পড়েছে, তাড়াতাড়ি চল। নইলে তো কেউ চলে আসবে, তখন তো আমরা আর আম পাব না।"

তবে ইতিপূর্বে আমরা অনেক ভূতের গল্প শুনেছিলাম। তার মধ্যে একটা ছিল, একটা ঠাকুমা একদিন এইরকম ভাবেই আম কুড়াতে গিয়ে প্রচুর আম কুড়ি এনেছিল তারপর সকালবেলায় দেখে তার ব্যাগের মধ্যে সব আমগুলো ইট হয়ে গেছে। তাই দাদা বলছিল, "জানিস তো বুনু ওগুলো মনে হয় আম না। এত আম হয় নাকি। ওগুলো জানিস তো ইট। ঐদিন ওই ঠাকুরমা যে গল্পটা বলল না সে গল্পটার মতোই।"

1000251443.jpg

দাদার কথা শুনে আমিও ভাবলাম হয়তো তাই হবে। এই ভেবে আমরা বাগানের সামনে বোকার মত তিরিশ মিনিট দাঁড়িয়েই থাকলাম। তারপর দেখলাম একজন বাগানে এসেছে। সে এসে আম কুড়াতে শুরু করেছে। তাকে দেখি আমরা সাহস করে বাগানে ঢুকে দেখি ও মা, ওগুলো সত্যি সত্যিই আম। তারপর আমরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে হাফ বস্তা আম কুড়িয়ে ছিলাম। যদিও সেই আমগুলো মা সবাইকে ভাগ করে দিয়ে দিয়েছিল। তবুও এই আম কুড়ানোর গল্প আমার আজীবন মনে থাকবে।

তবে আজ এই সবই অতীত। তবে সেই আমবাগানটা সামনে দিয়ে গেলে এখনো সেইসব দিনের কথা মনে পড়ে। যদিও এখন আম বাগানটার ৪ভাগের তিন ভাগেই বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে।

আপনাদের কার কার এরকম আম কুড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে অবশ্যই জানাবেন। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন , সুস্থ থাকবেন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

একদমই তাই ফেলে আসা স্মৃতি আমাদের সকলকে অনেক কিছু মনে করিয়ে দেয়। তোমার আম কুড়ানোর কথা দেখে আমারও নিজেরও অনেক কিছু মনে পড়ে গেল। আমরা ছোটবেলায় যখন ঝড় হতো, ঠিক তারপরেই চলে যেতাম আম কুড়াবার জন্য। সেটা যদি বিকেলবেলা হত তাহলে বিকেল বেলায় ছড়তাম একটা প্যাকেট নিয়ে আর যদি রাতের বেলায় ঝড় হতো তাহলে দিদাকে বলতাম ভোরবেলায় তুলিয়ে দেওয়ার জন্য। না হলে অন্য কেউ গিয়ে আমগুলো কুড়িয়ে নিতে পারে। এরকম করে প্রায় প্রচুর আম জমা করতাম আর প্রত্যেকদিন দিদাকে বলতাম আমাকে চাটনি করে দেবার জন্য।। ছোট থেকেই আমি একা একা মানুষ হয়েছি তাই পাশের বাড়ি সমবয়সী সকলের সাথে ছুটতাম। তোমার সুন্দর মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।