কবিতার পত্রিকার প্রিন্টেড ভার্সানের জন্য সম্পাদকীয় লিখলাম

in hive-129948 •  last month 

কবিতার পত্রিকার প্রিন্টেড ভার্সানের জন্য সম্পাদকীয় লিখলাম

💮💮💮💮💮💮💮💮💮


communication-2802996_1280.jpg
সোর্স


🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏


অনেকটা অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার দিনে জড়ো হয় নির্মীয়মান শূন্যতা। আর সেই শূন্যতাটুকুই আমাদের আশ্রয়। আশ্রয় যে সবসময় পরিপূর্ণ হতে হবে তার কোন কথা নেই। আমরা যেদিন শূন্য থেকে পথ চলা শুরু করেছিলাম, সেইদিনই শপথ করেছিলাম আলোর পথে যাওয়ার। একটি লিটল ম্যাগাজিন যে বৈপ্লবিক বিরোধ এবং লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে যায়, তা প্রতি যুগেই নতুন সময়ের সূচনা করে। আমরা জানি কবিতা হল সেই সময়ের সংকল্প, যেখানে আলো ফেরার দিনকে অনেক লড়াই এর পরেও বরণ করে নেয়া যায়। বিগত ১০০ বছর ধরে লিটল ম্যাগাজিন যে যাত্রাপথ পেরিয়ে এসেছে তাও ভীষণ বন্ধুর। প্রতি সময়েই এসেছে পরিবর্তিত পরিস্থিতির লড়াই। আর তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বদলেছে বিষয়ের অভিমুখ। ১৯৩০ সালের পত্রিকার অভিমুখ আর আজকের অভিমুখ কোনদিন এক হতে পারে না। কল্লোল পত্রিকাকে যদি আমরা প্রণিধানযোগ্য হিসেবে ধরি, তবে খুব সহজেই সময়ের সূচকটা নির্ণয় করা যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে সময়ে বাঙালির নিজস্বতা এবং সংস্কৃতিকে এক কথায় অধিকার করে নিয়েছিলেন, ঠিক সেই সময় জন্ম হয়েছিল কল্লোলের মত আরো কয়েকটি ব্যতিক্রমী পত্রিকা। যেখানে কবি জীবনানন্দ দাশ নিয়মিত সেই সময়ের সঙ্গেই যেন লড়াই করে গেছেন। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার উদ্দেশ্য যদি সামাজিক এবং সার্বিক হয়, তবে তা নতুন প্রতিষ্ঠানের আলোকেই আলোকিত হয়ে উঠতে পারে। প্রত্যেকটি লড়াইয়ের সেইটুকু অভিমুখ থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করি। বর্তমানে আমরা যে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তার সূচক পরিমাপ করবার সময় এসে গেছে। সময়কে ধরে রাখতে গেলে পত্রিকাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হয়। আমরা কবিতার আলো, প্রত্যেকটি সংখ্যা আমাদের ঘোষিত উদ্দেশ্য অনুযায়ী প্রকাশ করে চলেছি প্রায় দীর্ঘ ছয় বছর ধরে। আজ এই সংখ্যাটি প্রকাশের মুহূর্তে দাঁড়িয়েও আমাদের অভিমুখ একেবারে স্থির। অন্তর্নিহিত সময়ের মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে তিরতির করে বইয়ে নিয়ে চলা একটি পত্রিকার এক এবং একমাত্র উদ্দেশ্য। যে লক্ষ্য নিয়ে শ্রদ্ধেয় প্রমথ চৌধুরী সবুজপত্রের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন, আমরা এই যুগে দাঁড়িয়ে তাঁর অনুসারী হয়ে নতুন ভাবনার আঙ্গিকে একটি একটি করে সংখ্যা সাজিয়ে তুলছি আপনাদের জন্য। আন্দোলনের বিভিন্ন রূপরেখা সাজিয়ে তুলতে হয় বরাবর। যে আন্দোলনের মধ্যে নিহিত থাকে গভীর ভাবনা এবং আত্মপ্রত্যয়, একমাত্র সেই চলন দিকনির্দেশী হতে পারে।
আমাদের এই বৈশাখী সংখ্যার উদ্দেশ্য গুচ্ছ কবিতা। কী এই গুচ্ছ কবিতা? একজন কবির একটি কবিতা প্রকাশ এবং গুচ্ছ কবিতা প্রকাশের মধ্যে পার্থক্যই বা কী? খুব স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে একজন কবি এবং তার লেখনীকে মানুষের সামনে তুলে আনতে গেলে তাঁর একটি কবিতাই যথেষ্ট নয়। কবিতার অর্থ এবং তার চলন সব ক্ষেত্রে যে সমান হবে তার কোন কথা নেই। তাই একজন কবির একগুচ্ছ কবিতা পড়লে তাঁকে অনেক কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয় বলেই আমরা মনে করি। তাই বেশ কয়েক বছর পরে বাংলা সাহিত্যের উর্বর জমিতে দাঁড়িয়ে আমরা গুচ্ছ কবিতা সংখ্যা করবার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রত্যেক কবির পাঁচ থেকে ছয়টি লেখা নির্বাচিত করে এই সংখ্যায় প্রকাশ করা হল৷ যদিও এই সংখ্যায় লেখা এসেছে প্রচুর। কিন্তু কিছু অত্যাবশ্যক সমস্যাকে সম্মুখীন করে আমরা সকল ভালো লেখাকেই এই সংখ্যায় স্থান দিতে পারিনি। সে ক্ষেত্রে বাছাই করে কিছু সংখ্যক কবির লেখনী আপনাদের সামনে তুলে আনলাম।
বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে কবিতার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করার সময় এসেছে। আমরা যদি বিশ্বাস করি যে এই উত্তর আধুনিক সাহিত্য চর্চার সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা পূর্বতন কবিতা চর্চার আঙ্গিকে পিছিয়ে পড়েছি, তবে তা একেবারেই ভুল। অগ্রজ কবিদের হাত ধরে আমরা যেমন হাঁটতে শিখেছি, ঠিক সেভাবেই স্বতন্ত্রতার উপর জোর দিয়ে আমরা সাবলীল হতেও শিখেছি। ধীরে ধীরে কবিতার আলোর অভিমুখকে উত্তর আধুনিকতার আলোয় সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি আমরা আমরা জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ মানি না। আমরা বিশ্বাস করি অসীম মানবতায়। আর কবিতা হতে পারে সেই সংগ্রামের এক নিপুণ হাতিয়ার। প্রতিযুগেই বাংলা কবিতা সাধ্যমত সেই সময়টুকুকে ধরে রাখতে পেরেছে। আর আমরা এই বিশ্বাস নিয়ে পথ চলি, কবিতার আলো যে বিচ্ছুরণকে উদ্দেশ্য করে পথ হাঁটে, তার নির্যাসটুকু ভীষণ তীক্ষ্ণ। সমাজের না বলা কথাগুলো পত্রিকার মাধ্যমে সামনে নিয়ে আসাই আমাদের কাজ।
পত্রিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে যে সামাজিক দায়বদ্ধতাকে সাথে করে আমরা এগিয়ে চলি, তার প্রতিও আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। সমাজ এবং কবিতার মধ্যে যে অঙ্গাঙ্গী যোগাযোগ রয়েছে, তা কখনোই অস্বীকার করা যায় না। তাই যাঁরা বলেন, লিখে কী হবে? তাঁদের কাছে আমাদের বিনীত বার্তা, যে লিখে যদি কিছু না হত তবে শিল্প বিপ্লবের আগুন শুধুমাত্র গ্রেট ব্রিটেন থেকে সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তো না। তার থেকেও বড় কথা, লেখনীর যদি কোন ক্ষমতা না থাকতো, তাহলে তৎকালীন ইংরেজ সরকার নীলদর্পণ নাটকের জন্য দীনবন্ধু মিত্রকে গ্রেপ্তার করতো না। আর জেমস লং সাহেবকে টাকা দিয়ে তাঁকে ছাড়াতে হতো না। সবথেকে বড় উদাহরণ হল পথের দাবী। ১৯২৭ এর ৪ জানুয়ারি প্রকাশিত গেজেটে পথের দাবী নিষিদ্ধ হয়। সারা দেশ জুড়ে এই নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছিল। এমনকি আইনসভাতে নেতাজী সুভাষ বোস ও হরেন্দ্রনাথ চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন নিষিদ্ধকরণের যৌক্তিকতা নিয়ে। তাই লেখনী যে এক ধারালো তলোয়ারে পরিণত হতে পারে, সে নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আর সামাজিক পট পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি পত্রিকা যেভাবে অংশগ্রহণ করে, সেভাবে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আর কোনভাবে হতে পারে না। লিটল ম্যাগাজিনের এইটুকু অভিমুখ এবং আদর্শগত ভাবধারা থাকা ভীষণ জরুরী। সেক্ষেত্রে আমাদের এক একটি সংখ্যাও খুব সুস্পষ্টভাবে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে সাহিত্যের আঙ্গিকে সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারে।

কৌশিক চক্রবর্ত্তী
কোন্নগর, হুগলি


🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1LsUc8S2zjHiaW6UcX2M5SAfbrPcxiCjQzCc6aZJSjUDgt85bSStrwGCUjZMWCDKxNata4NQ2cZTKGxsY.png

FrDSZio5ZCzUamf35asauSgs1tnNGCc8exBrDii52qi3JpjTyYCF9oFoYfs1EV4VTnFw6faxzt5X7uHiwMAHmLS3ef2Jb2JcxHBkpRBd2y...Qa3Q3c7Biv4c8mKsr8DHNVYqqpVomFSv1wmkMCbhs7oCjb14sjkA3vxAfSRk8QPzNZ5UirrZUzvHCXygHCV49RVVZBeTFCeo47WcQXnjLYGy2RNdJQycJW4cN.jpeg

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.