একটি কবিতাময় বিকেল৷ ক্যাফে কফি ও কবিতায় একটুকরো বাঙালিয়ানা
আজকের বিকেলটা যেন সময়ের পাতা থেকে ছিঁড়ে আনা কোনো কবিতা৷ যার প্রতিটি ছত্রে ছিল বন্ধুত্ব, স্বাদ, গন্ধ, আর বাঙালি সংস্কৃতির উষ্ণ ছোঁয়া। কয়েকজন আপনজন বন্ধু মিলে গিয়েছিলাম শ্যামবাজার অঞ্চলে অবস্থিত একটি ব্যতিক্রমী ক্যাফেতে। যার নাম ক্যাফে কফি ও কবিতা। নাম শুনেই যেন একটা মোহ তৈরি হয়েছিল, আর সেখানে পৌঁছে সেই মোহ বাস্তব রূপে ধরা দিল।
শ্যামবাজারের ব্যস্ত চত্বরে এই ছোট্ট ক্যাফেটি একেবারে নির্জন নয়, কিন্তু তার মধ্যে একটা শান্তির আবরণ আছে। ক্যাফেতে ঢোকার মুখেই চোখে পড়ে কাঠের দরজার ওপর ঝুলে থাকা এক প্ল্যাকার্ড। "আড্ডা মানেই কফি, আর কফি মানেই কবিতা"। যেন ঢোকার আগেই মনকে প্রস্তুত করে দেওয়া হয়। এখানে সময় কাটবে একটু ধীরে, একটু আলতো করে।
ক্যাফের ভিতরের সাজসজ্জা একেবারেই ঘরোয়া। দেওয়ালজুড়ে ছড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ আর সত্যজিৎ রায়ের ছবির কোলাজ। কোথাও একটা কোণে রাখা আছে পুরনো গ্রামোফোন, আর সেখান থেকে যেন ভেসে আসে হেমন্ত বা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান। দেওয়ালে খয়েরি কাঠের খাপে খাপে কবিতার লাইন, কবির স্বাক্ষর, পুরনো বইয়ের পাতার প্রতিলিপি। এই ক্যাফেটি যেন খাবারের চেয়ে বেশি অনুভবের জায়গা।
আমরা চারপাঁচজন বন্ধু মিলে বসলাম একটা জানালার পাশে কাঠের বেঞ্চে। বাইরে বিকেলের রোদ পড়ছিল ধূসর দেওয়ালে, আর ভিতরে আলো ছিল ঝিমধরা, নরম। প্রথমে এল চিকেন স্যান্ডউইচ। নরম ব্রেড, মশলাদার চিকেন আর চিজের হালকা ছোঁয়া, এক কামড়েই বোঝা গেল, রান্নার প্রতি যত্ন কতখানি। তারপর এল ফিস ফ্রাই। বেশ বড়সড়, বাইরে খাসা করে ভাজা, ভিতরে নরম ও তাজা মাছ, আর সঙ্গে ছিল ঘন কাসুন্দির বাটি, যা পুরো ডিশটিকে বাঙালিয়ানার পূর্ণতা দিল।
কিন্তু আজকের দিনের সবচেয়ে বড় চমক ছিল আমার জন্য চিকেন লাসানিয়া—জীবনে এই প্রথমবার খেলাম। পাস্তার পাতার মধ্যে চিকেনের মশলাদার স্তর, তার ওপরে গলে পড়া চিজ আর অদ্ভুত সুন্দর একটা সুগন্ধ। মুখে দিতেই চোখ বন্ধ হয়ে গেল, যেন খাবারের মধ্যে দিয়েই একটা নতুন অভিজ্ঞতার দরজা খুলে গেল।
খাবারের পাশাপাশি চলছিল প্রাণখোলা আড্ডা। কেউ কলেজ জীবনের গল্প বলছে, কেউ শোনাচ্ছে অফিসের ছোট ছোট হাসির ঘটনা, আবার কেউ কবিতার লাইন কণ্ঠে তুলে নিচ্ছে হঠাৎ করে। এত সহজ, এত সাবলীল, আর এত আপন মুহূর্ত একসাথে পাওয়া যায় কই! সময় কখন কেটে গেল টেরই পেলাম না।
বিকেলটা সন্ধ্যায় গড়িয়ে গেল, বাইরের আলো একটু একটু করে ম্লান হলো, আর ক্যাফের ভিতর যেন আলো আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বন্ধুত্বের আলো, মমতার আলো। যখন উঠে বেরোলাম, মনে হলো আজ শুধু একটা খাবারের জায়গা ঘুরে দেখলাম না, বরং একটা অনুভবকে ছুঁয়ে এলাম, যা দীর্ঘদিন মনে থেকে যাবে।
ক্যাফে কফি ও কবিতা। এই নামটা আজ থেকে আমার কাছে শুধুই একটা ঠিকানা নয়, এটা হয়ে রইল একটি বিকেলের গল্প, কিছু মুহূর্তের অভিজ্ঞান, কিছু অমলিন বন্ধনের স্মৃতি।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/KausikChak1234/status/1913966269608722917?t=QVldQu80R7vKhElO98nFJw&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1913966601432424713?t=mywCIqiaV45UVlL0G3G14Q&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1913966897801965874?t=wTJ3fqIbr_7DgLCIUidAdw&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1913967151276229114?t=_ab7-rYmE3JWerQGPTJcXQ&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1913967611882201477?t=Tyzos2HAVHqFptaVRiBnGA&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1913967877176127844?t=Swg-CmASYnducQdbAxyy9A&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit