শৈশবের স্কুলে আইসক্রিম খাওয়ার কিছু অনুভূতি

in hive-129948 •  5 days ago 

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তবে মনমানসিকতা ভালো নেই। আর মনমানসিকতা যদি ভালো না থাকে তাহলে শরীর মন অচল হয়ে পড়ে। তারপরেও আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি শৈশবের কিছু কথা নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার শৈশবের কিছু স্মৃতির অনুভূতি জেনে আসি।

আসলে শৈশবকাল আমাদের সবার জীবনে একটি স্মৃতিমধুর। আমি মনে করি শৈশবের স্মৃতি আমাদের সবার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা আমাদের প্রতিটিদিন প্রতিটি মুহূর্ত ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই শৈশবের দিনগুলোর মাঝে। শৈশবে আমাদের ছিল না কোন ভাবনা, ছিলনা কোন দুঃশ্চিন্তা বা কোন দায়িত্ববোধ। তখন আমাদের প্রতিটি দিন ও মুহূর্ত ছিল একদম সাদাসিদে ও আনন্দ পূর্ণ। এখনো সেই দিনগুলোর প্রতিটা সময় ও মুহূর্তগুলো মনে পড়লে মনে হয় যেন সেদিনের সেই দিন গুলোই অনেক সুন্দর ছিল। এখন ভাবী কেন বড় হতে গেলাম। চাইলেও ফিরে যেতে পারবো না সেই শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলোতে। তাইতো আজও চলে গিয়েছিলাম শৈশবের কিছু মধুর স্মৃতিতে। আর সেই মধুর স্মৃতির কিছু অংশ আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এলাম।

children-9217152_1280.jpg

Source
শৈশব মানেই একরাশ রঙিন স্মৃতি, হাসি, দুষ্টুমি আর ছোট ছোট আনন্দে ভরা দিন। সেইসব ছোট ছোট আনন্দের মধ্যে একটি ছিল স্কুলে আইসক্রিম খাওয়ার অভিজ্ঞতা। আজও চোখ বন্ধ করলেই স্পষ্ট মনে পড়ে সেই উচ্ছ্বাস, সেই প্রতীক্ষা, সেই আনন্দের মুহূর্ত, যেটা একটুকরো আইসক্রিম দিয়েই পুরো দিনটাকে রঙিন করে তুলত। আমাদের স্কুলে মাসে এক-দুবার আইসক্রিমওয়ালা আসত। সকাল থেকেই আমরা তার অপেক্ষায় থাকতাম। তখন মোবাইল ছিল না, কোনো ঘোষণা আসত না—তবুও কে যেন আগেই খবর দিয়ে দিত, “আজ আইসক্রিমওয়ালা আসবে!” ব্যস, মনটা তখন থেকেই উতলা হয়ে উঠত। টিফিনের ঘন্টা পড়ার আগেই আমরা চোখে-মুখে আনন্দ নিয়ে বসে থাকতাম। কেউ কেউ টিফিনের টাকা জমিয়ে রাখত, কেউবা বাড়ি থেকে আগেই বলে কিছু টাকা আনত আইসক্রিমের জন্য।

আইসক্রিমওয়ালার ঘণ্টা বাজিয়ে আসা যেন ছিল এক রাজকীয় আগমনের মতো। তার হাতে থাকত রঙিন বেলুনে সাজানো বাক্স, পেছনে টাঙানো হ্যান্ডবেল, আর মুখে হাসি। সঙ্গে থাকত ছোট ছোট কাপ বা কাঠির ওপর সাদা, কমলা, গোলাপি রঙের আইসক্রিম। আমরা তখন হুড়োহুড়ি করে দৌড়ে যেতাম তার দিকে। লাইন ঠিক রাখতে শিক্ষকরা মাঝে মাঝে হস্তক্ষেপ করতেন, কিন্তু আমাদের উৎসাহের কাছে সবকিছুই হার মানত। যেদিন টাকা থাকত না, সেদিন একটু কষ্ট হতো বটে। কিন্তু বন্ধুদের কেউ না কেউ ভাগ করে খেতে দিত। কখনো অর্ধেক, কখনো এক চামচ, আবার কখনো একটা কাঠির আইসক্রিম দুই ভাইয়ের মতো ভাগ করে খাওয়া হতো। সেই ভাগাভাগির মাঝেও যে ছিল একধরনের মিষ্টি বন্ধুত্ব, যা আজকের দিনে বড়ই অমূল্য বলে মনে হয়।

আইসক্রিম খাওয়ার পর ঠান্ডায় জিভ অবশ হয়ে যেত, ঠোঁটে জমে যেত শীতলতা, তবু সেই ঠান্ডা আমাদের আনন্দে ভাটা ফেলতে পারত না। ক্লাসে ফিরে কেউ মুখ লুকিয়ে চুপচাপ আইসক্রিম চাটত, কেউ আবার দাঁত কাঁপিয়ে হলেও শেষ টুকরো পর্যন্ত খেত। শিক্ষকরা মাঝে মাঝে বকতেন, “ঠান্ডা খেয়ে আবার জ্বর হলে কিন্তু স্কুল কামাই করলে চলবে না!” কিন্তু আমরা কে শুনতাম? আমাদের কাছে তখন আইসক্রিম মানেই ছিল উৎসব। সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল, সেই আইসক্রিমের স্বাদ ছিল সাধারণ, দামও ছিল সামান্য, কিন্তু তার আনন্দ ছিল অপরিসীম। এখনকার দামী আইসক্রিমেও সেই স্বাদ পাই না। কারণ সেই সময়টা ছিল নির্মল, নিঃস্বার্থ, এবং একেবারে নিখাঁদ আনন্দের সময়।

কখনো কখনো স্কুলের কোনো বিশেষ দিবসে আইসক্রিম বিতরণ করা হতো—যেমন প্রতিষ্ঠা দিবস, স্বাধীনতা দিবস বা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। তখন পুরো ক্লাস একসাথে আইসক্রিম পেতাম। শিক্ষকরা নিজের হাতে বিতরণ করতেন। মনে হতো, আমরা যেন কোনো বিশেষ পুরস্কার পেয়েছি। আজ এত বছর পর, জীবনের ব্যস্ততায় ডুবে যেতে যেতে যখন হঠাৎ কোনো ছোট দোকানে সেই পুরনো ধরনের কাঠির আইসক্রিম দেখি, তখনই শৈশব ফিরে আসে। মনে পড়ে যায় সেই স্কুল মাঠ, সেই বন্ধুরা, সেই রোদেলা দুপুর আর সেই আইসক্রিমওয়ালার ঘণ্টার শব্দ।

শৈশবে স্কুলে আইসক্রিম খাওয়ার স্মৃতি শুধুই একটি খাবারের স্মৃতি নয়, এটি বন্ধুত্ব, অপেক্ষা, আনন্দ, ভাগাভাগি আর নিষ্পাপ ভালোবাসার এক অনন্য প্রতিচ্ছবি। এমন একটি ছোট্ট মুহূর্ত যে এতটা গভীরভাবে হৃদয়ে দাগ কেটে যেতে পারে, তা হয়তো তখন বোঝা যেত না। কিন্তু আজ বুঝি—শৈশবের সেই আইসক্রিমে লুকিয়ে ছিল জীবনের সবচেয়ে মধুর অনুভূতি।

কেমন লেগেছে আপনাদের সবার কাছে আজ আমার শৈশবে ফেলে আসা সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে পোস্টটি। আশা করছি আপনাদের সবার কাছে আমার পোস্টটি পড়েও অনেক ভালো লেগেছে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন সে পর্যন্ত আগামীতে আবার নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসবো ইনশাল্লাহ আল্লাহাফেজ।

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

image.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

শৈশবের স্কুলে আইসক্রিম খাওয়ার কিছু অনুভূতি শেয়ার করেছেন।আইসক্রিমের এই স্মৃতিগুলো সত্যিই অতুলনীয়! স্কুলের শেষে বন্ধুদের সাথে আইসক্রিম শেয়ার করে খাওয়ার মজাই আলাদা ছিল। আপনার লেখাটা পড়ে আমারও পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল—ধন্যবাদ এমন সুন্দর স্মৃতি শেয়ার করার জন্য!