অন্যকে ভালোবাসার আগে নিজেকে ভালোবাসুন।

in hive-129948 •  13 days ago 

২য় জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , গ্রীষ্মকাল


আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।



self-confidence-2076798_1280.jpg

source

কেমন আছেন সবাই আশা করছি ভালো আছেন আজ আমি আপনাদের সাথে ভিন্ন একটি টপিক নিয়ে আলোচনা করব । যদিও বাহিরে অনেক গরম তবুও, কিছুটা বৃষ্টির ছোঁয়ায় মনটা বেশ ভালো আছে । আজ আমি আপনাদের সাথে , অন্যকে ভালোবাসার আগে নিজেকে ভালোবাসুন এ বিষয়ে আমার নিজস্ব মতামত শেয়ার করব । যদিও লেখাগুলো কারো মতের সাথে মিল নাও থাকতে পারে , চলুন তাহলে শুরু করা যাক -

নিজেকে ভালোবাসা মানে হলো নিজেকে গুরুত্ব দেওয়া, নিজের অস্তিত্বকে গ্রহণ করা এবং নিজের প্রতি সম্মান রাখা। এটা এমন একটা অভ্যাস, যা আমাদের মন, শরীর আর সমাজের সাথে সম্পর্ককে ভালো রাখে। আমরা অনেক সময় জীবনের সবটা দিয়ে অন্যকে খুশি করতে চেষ্টা করি—পরিবার, বন্ধু, অফিস, সমাজ—সবাইকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে নিজের কথা ভুলে যাই। নিজের ইচ্ছা, আবেগ, আর স্বপ্নগুলোকে চেপে রাখি। কিন্তু ভাবুন তো, আপনি যদি নিজেকেই ভালো না বাসেন, নিজের কথা না ভাবেন—তাহলে অন্যকে ঠিক করে ভালোবাসবেন কীভাবে? আসলে, নিজের ভালোবাসাই সব ভালোবাসার মূল। এটা কোনো অহংকার নয়, বরং এটা হলো নিজেকে বোঝা, নিজের ভুলকে মেনে নেওয়া, নিজের ভালো দিকগুলোকে দেখে আনন্দ পাওয়া। নিজের ভালোবাসা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, সাহস জোগায়, ব্যর্থতার পরেও উঠে দাঁড়াতে শেখায়। তখন মানুষ বোঝে, জীবনের সুখ-দুঃখ, পাওয়া-না-পাওয়া, সব কিছুই নিজের হাতে। আর এই ভাবনা থেকে এক ধরনের শান্তি আসে মনে।

অনেকেই মনে করেন নিজেকে ভালোবাসা মানে স্বার্থপরতা, কিন্তু তা নয়। স্বার্থপর মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের ক্ষতি করে, আর আত্মপ্রেমী মানুষ নিজে ভালো থাকার পাশাপাশি অন্যকেও সম্মান করে। সে জানে জীবনে কষ্ট কী, তাই কাউকে কষ্ট দিতে চায় না। বরং সে আরও সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। জীবনে যখন ঝড় আসে, তখন যাঁরা নিজেকে ভালোবাসেন, তাঁরা নিজেদের ভরসা দিয়ে টিকে থাকেন। কারণ তারা জানেন, জীবন সব সময় একরকম থাকে না, খারাপ সময় গেলে ভালো সময় আসবেই। আর যারা নিজের খারাপ সময়েও নিজেকে আগলে রাখে, তারা জীবনকে সুন্দরভাবে সামাল দিতে পারে। তারা শুধু বাহ্যিক সাফল্য দেখে না, নিজের মনের শান্তিকেও গুরুত্ব দেয়। নিজের যত্ন নেয়, নিজের ভালো-মন্দ বোঝে, নিজের শরীর ও মনের খেয়াল রাখে।

এখনকার জীবনে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, একাকিত্ব খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ সব সময় ব্যস্ত, কিন্তু নিজের সঙ্গে সময় কাটায় না। কেউ কেউ বাহ্যিকভাবে সফল, অনেক টাকা-পয়সা আছে, নাম আছে, কিন্তু মনের ভেতরে ভীষণ একা। কেন জানেন? কারণ তারা কখনো নিজেকে ভালোবাসেনি, নিজের আবেগকে গুরুত্ব দেয়নি, নিজের মনের কথা শোনেনি। তাই নিজেকে ভালোবাসা মানে নিজের অনুভূতিগুলোকে বুঝে নেওয়া, নিজের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেওয়া, আর নিজের পাশে দাঁড়ানো। একজন আত্মপ্রেমী মানুষ জানে কখন কাজ থেকে বিরতি নিতে হয়, কখন নিজের জন্য সময় রাখতে হয়। সে জানে, নিজে ভালো না থাকলে কাউকে ভালো রাখা যায় না।

সম্পর্ক হোক, পরিবার হোক, সমাজ হোক—সব কিছুর ভিত্তি হলো নিজের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। আপনি যদি নিজের সঙ্গে সুখে না থাকেন, তাহলে অন্যদের সঙ্গেও স্থায়ীভাবে সুখী থাকতে পারবেন না। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিজের প্রতি সদয়, তারা শরীরেও সুস্থ থাকে, মনেও প্রশান্ত থাকে। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখা। নিজেকে জিজ্ঞেস করা, "আমি আসলেই কেমন আছি?", আর সেই অনুযায়ী নিজেকে সাহায্য করা। নিজের মন খারাপ হলে তার কারণ জানা, মন ভালো রাখতে যা দরকার, সেটা করা।

নিজেকে ভালোবাসা মানে কিন্তু দামি কিছু কেনা নয় বা বাইরে ঘুরতে যাওয়া নয়। এটা মানে নিজের মনের শান্তির জন্য সময় দেওয়া, নিজের আনন্দের বিষয়গুলো খুঁজে বের করা। আপনি যদি নিজেকে সম্মান করেন, তবে অন্যের থেকেও সম্মান আশা করতে পারবেন। কারণ মানুষ যেমনভাবে নিজেকে দেখে, অন্যরাও তাকে সেই চোখে দেখে। তাই নিজের ভুল নিয়ে নিজেকে ছোট করে দেখা, নিজের স্বপ্নগুলোকে অপূর্ণ রেখেই বসে থাকা—এসব একদমই করা উচিত নয়। বরং নিজের ক্ষমতা, প্রতিভা, স্বপ্নকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার।

নিজেকে ভালোবাসা মানে জীবনের দায়িত্ব নিজে নেওয়া। কেউ এসে আপনাকে সুখী করে দেবে না, আপনার উন্নতি করিয়ে দেবে না—এটা আপনাকেই করতে হবে। আর এজন্য নিজের প্রতি ভালোবাসা থাকা দরকার। আত্মপ্রেম আপনাকে সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, এবং ইতিবাচক করে তুলবে। তখন আপনি নিজে ভালো থাকবেন, আশপাশের মানুষদেরও ভালো রাখতে পারবেন। আজকাল অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে, দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। সমাজে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে, মানুষ একা হয়ে পড়ছে। এর অন্যতম কারণ হলো—নিজেকে ভালো না বাসা, নিজের দিকে খেয়াল না রাখা।

তাই আর দেরি নয়। আজ থেকেই শুরু হোক নিজের প্রতি ভালোবাসা—নিজেকে বোঝা, সময় দেওয়া, সম্মান করা। নিজেকে বলুন, “আমি যথেষ্ট ভালো, আমি আমার মতো করে সুন্দর।” তখনই দেখবেন জীবন অনেক সহজ, সুন্দর আর অর্থপূর্ণ হয়ে উঠেছে।


সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।

1000038736.webp


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার লেখাটি সত্যিই হৃদয়স্পর্শী এবং চিন্তার উদ্রেক করে। নিজেকে ভালোবাসার গুরুত্ব যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা আমাদের সবার জন্য একটি দারুণ শিক্ষা। জীবনের ব্যস্ততায় নিজেকে ভুলে যাওয়া থেকে বিরত থাকার বার্তা খুব প্রয়োজনীয়। মন ও শরীরের সুস্থতার জন্য আত্মপ্রেম অপরিহার্য, এটি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। আপনার লেখায় পাওয়া ইতিবাচকতা অনুপ্রেরণার উৎস। ভবিষ্যতে এরকম আরও ভালো লেখা পাবার আশা রাখছি ধন্যবাদ ভাইয়া।

বাহ্! দারুণ একটি টপিক নিয়ে পোস্ট শেয়ার করেছেন ভাই। আসলেই আমাদের সবার উচিত নিজেকে ভালোবাসা। তাহলে জীবনটা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে এবং মানুষকে আরও বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করবে। যাইহোক পোস্টটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।